সোয়া ২ কোটি টাকার ইয়াবা গায়েব
দোষ স্বীকার কনস্টেবল ইমতিয়াজের:জড়িত দুই ইন্সপেক্টরসহ ১১ পুলিশ সদস্য
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পুলিশ প্রশাসনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করা ‘সোয়া ২ কোটি টাকার ইয়াবা গায়েব’ ঘটনার তদন্তে অবশেষে মুখ খুলেছেন কক্সবাজার আদালতের এক বিচারকের গানম্যান কনস্টেবল ইমতিয়াজ হোসেন। টেলিগ্রাম নিউজের হাতে থাকা অকাট্য প্রমাণের সামনে সব সত্য উপস্থাপন করতে তিনি বাধ্য হয়েছেন। এরপর তা ছেড়ে দেওয়ার বিষয়েও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন তদন্ত কমিটির কাছে। তিনি জানিয়েছেন, এ ঘটনার সঙ্গে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) বাকলিয়া থানার দুই ইন্সপেক্টরসহ ১০ পুলিশ সদস্য জড়িত রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাতে তদন্ত কমিটির কাছে এসব তথ্য জানিয়েছেন ৯০ হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক হওয়া পুলিশ সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন। লিখিত ও মৌখিক জবানবন্দিতে কনস্টেবল ইমতিয়াজ হোসেন পুরো ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘গত ৮ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ২টার দিকে একজন এএসআই আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে পুলিশ বক্সে নিয়ে যায়। সেখানে সিভিল পোশাকে বাকলিয়া থানার ওসি (তদন্ত) তানভীর আহমেদ, সিভিলে একজন এসআই, পুলিশ পোশাকে আরেকজন এসআই, তিনজন এএসআই, একজন পুরুষ কনস্টেবল এবং দুইজন মহিলা কনস্টেবল ছিলেন। আমার লাগেজ খুলেছিল একজন পাবলিক চেকার। সে চেইন খুলে ইয়াবা দেখার পর পুলিশ চেইন বন্ধ করে দিতে বলে। তারা ইয়াবাগুলো গুনেনি। পরে তারা সেগুলো কী করেছে আমি জানি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘একজন এসআই সাদা কাগজে একটি সিজার লিস্ট তৈরি করেছিল। বাকলিয়া থানার ওসি (তদন্ত) তানভীর আহমেদ আমার জবানবন্দি নিয়েছিল। আমার কাছ থেকে জবানবন্দিতে স্বাক্ষর করানো হয়। সেখানে আলাদা আলাদা পেজ ছিল। পরে আমাকে এসব বিষয় কাউকে না জানানোর জন্য বলা হয় এবং তারাও আমার ক্ষতি করবে না বলে নিশ্চিত করে। এরপর কোনো একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনার পর ভোরের দিকে আমাকে একটি গাড়িতে তুলে দেয়।’ কনস্টেবল ইমতিয়াজ বলেন, ‘চাকরি চলে যাওয়ার ভয়েই এতদিন কিছু স্বীকার করিনি। এছাড়া বাকলিয়া থানা পুলিশ আমাকে স্পষ্ট বলেছিল-কাউকে কিছু বললে বিপদ হবে।’
জানা গেছে, ৮ ডিসেম্বর রাত ১০টার দিকে দেশ ট্রাভেলসের কক্সবাজার কলাতলী কাউন্টারে যায় পুলিশ সদস্য ইমতিয়াজ। সেখান থেকে ঢাকার একটি টিকিট কাটেন তিনি। তবে টিকিট কেটেছিলেন চকরিয়া থেকে ওঠার কথা বলে। কিন্তু তিনি উঠেছিলেন কলাতলি থেকেই। কারণ কক্সবাজার থেকে যেসব যাত্রী ওঠে, চেকপোস্টে তাদের প্রতি সন্দেহ থাকে। ১০টা ১৫ মিনিটের দিকে দেশ ট্রাভেলসের গাড়িটি (ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-১৬৪২) কলাতলি থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছাড়ে। ইমতিয়াজ গাড়ির ই-১ আসনে ছিলেন। গাড়িতে বসেই তিনি পুলিশের আইডি কার্ডটি সামনের ডি-১ সিটে ঝুলিয়ে দেন। এতে গাড়ির যাত্রীরাও বুঝে যায় ইমতিয়াজ পুলিশ সদস্য।
তদন্ত কমিটির একজন সদস্য টেলিগ্রাম নিউজ কে জানিয়েছেন, ‘কনস্টেবল ইমতিয়াজ শুরুতে বিষয়টি অস্বীকার করছিল। তবে যুগান্তরের সরবরাহ করা অডিও ও তথ্য উপস্থাপন করার পর তিনি ভেঙে পড়েন এবং কোনো যুক্তি উপস্থাপন করতে পারেনি। পরে ইয়াবাসহ আটক হওয়ার পুরো ঘটনা খুলে বলেন।’
এদিকে ইয়াবা গায়েবের সংবাদ প্রকাশের পর মঙ্গলবার স্বপ্রণোদিত হয়ে একটি পৃথক ‘মিস কেস’ নথি খুলেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এসএম আলাউদ্দিন মাহমুদ। এ বিষয়ে তদন্ত করে আগামী ১২ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দিতে সিএমপির উপ-কমিশনারকে (দক্ষিণ) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এর বাইরেও সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মর্যাদার একজন কর্মকর্তা বিষয়টি তদন্ত করছেন।
কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুস সাকিব খান বলেন, ‘ইয়াবা গায়েবের ঘটনায় আমরা বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে এখনই সবকিছু প্রকাশ করা যাচ্ছে না। ওই পুলিশ সদস্য ইয়াবাগুলো কার কাছ থেকে নিয়েছে এবং বর্তমানে সেগুলোর অবস্থান কোথায়? সেটি নিয়ে আমরা কাজ করছি।’

আপনার মতামত লিখুন